প্রতিবন্ধী অদম্য ছৈয়দ হোসেন: টিউশনি করেই চলছে পড়াশোনা ও সংসার

জসীম উদ্দীন :

অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে দীর্ঘ বছর ধরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ছৈয়দ হোসেন। মাত্র ১২ দিন বয়সে বিরল রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়।

শিশুকাল, শৈশব, কৈশোরে পা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা ছিলনা ছৈয়দের। তবে যুবক বয়সে এসে একটি পা না থাকার কষ্ট হারে হারে টের পাচ্ছেন তিনি। তার ধারণা ভালো রেজাল্ট আর শিক্ষিত সার্টিফিকেট থাকলে এ দেশে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। নানান বৈষম্য, দারিদ্রতা তার উপরে একটি পা না থাকায় কেউ থাকে চাকরিতে নেবে না বলে তার আশঙ্কা।

মেধাবী ছাত্র ছৈয়দ হোসেন বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। সে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোনাক পানিরছড়ার মৃত বাচা মিয়ার ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর পরই পঙ্গু দারিদ্রতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেন তার পরিবার। তবে প্রতিবন্ধী ছৈয়দ হোসেনকে দমিয়ে রাখা যায়নি। নিজ ইচ্ছে শক্তির জোরে এক পা নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবারের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে স্কুলে ছুটে যেতো ছৈয়দ। এ জন্য তাকে অনেক মারধর করত তার পরিবার।

তার বন্ধু মিজানুর রহমান নুরী জানান, একটি পা না থাকায় এ সমাজে একটি মানুষকে কত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয় তা আমি দেখেছি। তিনি বলেন, ছৈয়দ হোসেনকে পায়ের কারণে টিটকারি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে ছেলে মেয়েরা মিলে মজা নেয়া, লাঞ্ছিত করা নিত্যদিনের ঘটনা। অথচ এ ছৈয়দ অভাবের কারণে কখনো এক বেলা খেয়েছে তো আবার কোন দিন খাইনি এমন ঘটনার সাক্ষী আমি। এযোগে একজন ভিক্ষুকেরও একটি স্মার্ট ফোন আছে। তবে শিক্ষিত ছৈয়দের একটি সাধারণ ফোনও নেই বলে জানিয়েছে তিনি। ছৈয়দ হোসনকে অপমানিত না করে তাকে নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত। এত কিছুর পরও সে নিজে খেতে পারুক বা না পারুক মাসে মাসে মায়ের জন্য টাকা পাঠিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলেও মন্তব্য তার।

দুঃখজনক হলে তার এ দীর্ঘ লড়াই পরিবারকে যেমন পাশে পায়নি। তেমনি শিক্ষিত সমাজ ও তার বন্ধু মহল থেকেও পায়নি কোন ধরনের উৎসাহ। তার বিপরীতে পঙ্গুত্বের কারণে নানান টিটকারি, অপমানের মুখোমুখি হতে হয়েছে সবসময়। কথাগুলো চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন ছৈয়দ হোসেন।

প্রতিবেদকের সাথে ছবিতে প্রতিবন্ধী ছৈয়দ হোসেন

সে আরও বলেন, টিউশনি করাতে গিয়েও এসেছে অনেক বাধা। এমন কি অনেক টিউশনি প্রার্থী স্থানীয় ছাত্ররা তাকে গালিগালাজ করে মারধর পর্যন্ত করেছেন। আবার অনেক ফ্যামিলি তাকে পঙ্গু বলে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। না খেয়ে থাকলেও মাসে মাসে মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয় বাড়িতে।

ছৈয়দ হোসেন পড়াশোনা শেষে শিক্ষক হতে চান। তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সাংসদের উদ্দেশে বলেন, হয়তো একটি পা আর গরীব হওয়ার কারণে আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পাবো না। কেউ দেবে না। যদি সরকার বা কোন দয়াবান ব্যাক্তি আমাকে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেন আমার খুব উপকার হবে। না হয় আমার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে যাবে।